আবহমানকাল থেকেই মসজিদ মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তাই মুসলিম সমাজে এটি যুগপৎভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। ইমাম হলেন এ প্রতিষ্ঠানের মধ্যমণি বা পরিচালক। কিন্তু খুলাফায়ে রাশেদীনের পরে ইসলামী শাসনের অনুপস্থিতিতে মসজিদ হয়ে পড়ে বিরান। কালক্রমে মসজিদ হয়ে পড়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালত আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট। সকাল সন্ধ্যা গুটিকয়েক মানুষের যিকির আযকার মাঝে মাঝে চোখে পড়লেও প্রায় সবসময়ই থাকে তালাবদ্ধ। বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অসংখ্য সমস্যা বিরাজমান। উক্ত সমস্যা দূরীকরণে সরকারসহ দেশের সচেতন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু আমাদের ইমামগণ তাঁদের হাজারো সমস্যার মধ্যে কর্তব্য সচেতন দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে হলেও দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। এখন অনেকের কাছে প্রশ্ন বাংলাদেশের দু’লক্ষাধিক মসজিদের ইমামগণ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কোন ভূমিকা পালন করছেন কি? করলে তা কতটুকু ? কিভাবে তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন? কি কি দায়িত্ব পালন করছেন? দায়িত্ব পালনকালে কোন সমস্যায় পড়ছেন কিনা? পড়ে থাকলে তা নিরসনের জন্য সম্ভাব্য উপায় বা কৌশল কি হতে পারে? এ বিষয়গুলোর উত্তর পেতেই “আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইমামদের ভূমিকা” শীর্ষক গবেষণা কর্মে হাতে নেয়া হয়। কাজটি সম্পাদনের নিমিত্ত খুলনা বিভাগের একটা বড় সংখ্যক ইমাম সাহেবগণের সাথে একান্তভাবে লিখিত প্রশ্নপত্রসহ সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। রচনায় তাঁদের সাথে সাক্ষাৎকালে মতবিনিময়ের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা প্রতিফলনের চেষ্টা করা হয়েছে।
বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ইমামদের প্রধান কর্মক্ষেত্র হিসেবে মসজিদ ও তার ঐতিহাসিক পরিচয় নিয়ে আলোচনা করার সাথে সাথে আমাদের দেশের মসজিদগুলোর সম্ভাব্য কার্যক্রম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইমাম ও তার পরিচয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইমাম শাব্দিক, ব্যবহারিক অর্থ, ইমামতের সংজ্ঞা ও প্রকার, একজন প্রকৃত ইমামের গুণাবলী, ইসলামী শরিয়াতে একজন ইমামের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও তার পটভূমিসহ উন্নয়ন কি? আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপাদান, পরিমাপকসহ এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও তা নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দেশের সচেতন ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষ হিসেবে ইমামগণের পালিত ভূমিকা, সে ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা ও তা নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইমামদের কাক্সিক্ষত ভূমিকার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দেশের প্রেক্ষাপট এবং ইমামগণের যোগ্যতা ও সুযোগ সুবিধার সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। সে সাথে সরকার ও সমাজের সহযোগী ভূমিকার কথা আলোচনা করা হয়েছে। সর্বোপরি ইমামগণের সকল দায়িত্ব-কর্তব্য ও ভূমিকার বিবরণকালে ইসলামী জীবনবোধের আলোকে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাষাগত জটিলতা ও দূর্বোধ্যতা এড়াতে দালিলিক বর্ণনা সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আগামী দিনের প্রত্যাশাপূরণে ইমামদের সম্ভাব্য ভূমিকার রূপরেখা মূলত জরিপ তথ্যের ভিত্তিতে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে কুরআন, হাদিস, ফিকহার গ্রন্থাবলী ছাড়াও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনা ও শেষকথা হিসেবে কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির ক্ষুদ্র পরিসরে আমাদের সম্মানিত ইমামগণকে আরও দায়িত্ব সচেতন করার লক্ষ্যে বক্তব্য উপস্থাপন করতে চেষ্টা করা হয়েছে। সে সাথে ইমামদেরকে সমাজ ও সরকারের যথাযথ সহায়তা করার সুপারিশ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটিই তা হলো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যেন ত্বরান্বিত হয় এবং ইমামগণ সম্ভব সবধরনের ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া মুসলিম অধ্যুষিত এদেশটির মানুষকে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে দাঁড়ানোর তাওফিক যেন আল্লাহ তাআলা দান করেন।
Dr. Meer Monjur Mahmood
Professor of Islamic Studies (Adjunct)
Manarat International University (MIU)
Copyright © 2024. All rights reserved. Developed by SolveEz